প্রতিদিন খাদ্যসমুহ খাবার পর সঠিক মাত্রায় এবং সঠিক সময়ে অভুক্ত অংশ শরীর থেকে বের না হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য।
খাদ্যের অসাড় দ্রব্য ২৪ হতে ৬ ঘন্টার মধ্যে শরীর থেকে বের হওয়াই নিয়ম।একটি সুস্থ্য মানুষ স্বাভাবিক খাদ্য খেয়ে প্রতিদিন ১/২ বার মল ত্যাগ করে।
তবে অনেকের খাদ্যবাসের হেরফেরের কারনে মল ত্যাগ করার অভ্যাসও ভিন্ন হতে পারে।
তবে যদি দীর্ঘদিন ধরে চলা প্রাকৃতিক নিয়ম হটাত করে বেশি পরিবর্তন হয়ে মল ত্যাগের নির্দিষ্ট সময়ের অনেক দেরীতে হয়,তবে তা কোষ্ঠকাঠিন্য হয়েছে বলে ধরা যায়।
এটি আসলে রোগ নয়।একটি বা অনেকগুলো রোগের লক্ষন হয়ে এটি প্রকাশ পায়।
তাই এমনটি হলে অবহেলার কোন সুযোগ নেই।
কেউ কোষ্ঠকাঠিন্য রোগে আক্রান্ত হলে,সেই বোঝে এর নিরব যন্ত্রনা।কেননা শারীরিক অসস্থির সাথে সাথে,কোন কাজে মন বসানো যায় না।মল পরিস্কার না হওয়া পর্যন্ত যে কোন খাবার গ্রহন ভালোভাবে করা দুস্কর।সবমিলিয়ে একটা বিরক্তিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়।
বিভিন্ন কারনে কোস্টকাঠিন্যে আক্রান্ত হতে হয়,তবে এর অন্যতম কারন শরীরে জলীত দ্রবনের ঘাটতি।যার জন্য বেশিরভাগ আমরা নিজেরাই দায়ী।
মল শক্ত হলে অনেকসময় পায়ু পথ ছিলে যেতে পারে বা ফেটে যেয়ে মলের সাথে রক্ত আসতে পারে।
ভয় না পেয়ে উপযুক্ত চিকিৎসা নিলে আরোগ্য হওয়া যায়।
কারনঃ
@স্বাভাবিক শাকসবজি খাবার পর পানি কম খাওয়া,অল্প পরিমান খাদ্য খেয়ে পাকস্তলীর দুই-ত্রিতীয়াংশ খালি রেখে আর এভাবে দীর্ঘদিন চললে এমনটি হতে পারে।
@অত্যাধিক পরীশ্রমে শরীর বেশি ঘামলে,শরীরে জলীয় দ্রবনের ঘাটতি হয়,এ জন্য প্রচুর পানি বা তরল পান না করলে।
@স্নায়ুতন্ত্রীয় রোগে,প্যারালাইসিস,মানসিক উত্তেজনা বা দীর্ঘদিনের পেটের ব্যাথা ইত্যাদিতে ভুগলে ক্ষুদ্রান্ত ও ব্রিহদান্তের সঙ্কোচনের কারনেও এমনটি হতে পারে।
@উত্তেজক খাবার বা বিভিন্ন মাদক বা ধুমপান গ্রহনের কারনে এমনটি হতে পারে।
#কুঅভ্যাস জনিত কারন যেমন,মল ত্যাগের চাপ অনুভব করলেও,তা ইচ্ছা করে আটকিয়ে রাখা বা দেরীতে করা।
#সঠিক সময়ে মল ত্যাগের অভ্যাস না করা।
#মল নালীর শেষ প্রান্তে পাইলস,ফিস্টুলা,অরশ প্রভৃতি আক্রমন করে,মল নালীর প্রান্ত ভাগ সরু হয়ে এ রোগ হতে পারে।
#মলাশয়ের ভেতর কোন প্রতিবন্ধকতা যেমন,টিউমার হলে এমনটি হতে পারে।
লক্ষনঃ
*মল অত্যন্ত শক্ত হয়,মল ত্যাগে কস্ট হয়।কোন ভাবেই মল বাহির হতে চায় না।
*সঠিক সময়ে মল ত্যাগ করা যায় না,মলে প্রচন্ড দুর্গন্ধ হয়।
*মল ত্যাগের সময় প্রচুর চাপ দিতে হয়।
*মুখে দুর্গন্ধ বা মুখ শুস্ক থাকতে পারে।
*শরীরে অস্থিরতা বা অনিদ্রা হতে পারে।কোন ভাবেই শান্তিবোধ হয় না।
*মাথা ব্যাথা বা ঝিমুনি বা মাথা ধরা হতে পারে।
*পেটে গ্যাস জমা হয় এবং সুচি বায়ু দেখা দেয়।
*পেট ভারি ভারি লাগে।
*ক্ষুদা থাকে না,খাদ্যে অনিহা জন্মে।
*কখন কখন পেটে ব্যাথা হতে পারে।
*পেট ফাঁপা বা বুক জ্বলা থাকতে পারে।
চিকিৎসাঃ
১।মল শক্ত হলে বা বের হতে না চাইলে LACTULOSE জাতীয় ঔষধ ভালো কাজ করে।
যেমন____SOLU__avolac,lactu,acilac.
মাত্রা____প্রত্যহ ২/৩ চা চামচ করে ২/৩ বার সেব্য।
অথবা,
SOLU____ Milk of Magneshia
মাত্রা____প্রত্যহ ২/৩ চা চামচ করে ২/৩ বার সেব্য।
২।পেট ব্যাথা থাকলে HYOSCINE BUTYL BROMIDE জাতীয় ঔষধ খাওয়া যায়।
যেমন___TAB___brospan,butapan,lopan,belcopan
মাত্রা____প্রত্যহ ১+০+১ করে পেট ব্যাথা থাকলে।
৩।পেটে অম্ল বা গ্যাস জমা হলে ESOMEPRAZOLE জাতীয় ঔষধ ভালো কাজ করে।
যেমন___TAB__esotid-20/40mg,nexam-20/40mg
মাত্রা____প্রত্যহ ১+০+১ করে আহারের ২০মিনিট আগে সেব্য.১০-১৪দিন পর্যন্ত।
৪।পেট ফাঁপা বা বুক জ্বালা থাকলে DOMPERIDONE জাতীয় ঔষধ খাওয়া যায়।
যেমন___TAB_motigut-10mg,omidon-10mg.don-a-10mg.
মাত্রা____প্রত্যহ ১+১+১ করে আহারের ২০মিনিট আগে সেব্য.১০-১৪দিন পর্যন্ত।
৫।বুক ধরফর বা মানসিক অশান্তি থাকলে NORTRYPTYLIN & TRYFLUPERAZINE জাতীয় ঔষধ ভালো কাজ করে।
যেমন___TAB__norflu,norzin,moodon.permival
মাত্রা____প্রত্যহ 0+0+১ করে ঘুমনোর আগে ৭দিন সেব্য।
৬।পেটে কৃমি হলে ALBENDAZOLE জাতীয় ঔষধ ভালো কাজ করে।
যেমন___TAB__alben-ds-400mg
মাত্রা____১বড়ি রাত্রে চুষে খেতে হয়।
এভাবে ৩ দিন অন্তর মোট ২বড়ি খাবে।
গর্ভবতী মহিলা বা ২বছরের নিচের শিশুদের দেয়া যাবে না।
৭।মলদ্বারে ফাটল বা অর্শ ,ফিস্টুলা,পাইলস থাকলে মলদ্বারে ব্যবহারে জন্য,
OINT____ANUSTAT.
পায়ূ পথের ভেতর ব্যবহার করতে হত,প্রত্যহ অন্তত ২ বার।
তবে মল ত্যাগের পরপর ব্যবহার করায় উত্তম।
পথ্যঃ
#প্রচুর পরিমানে পানি ও তরল খাবার খাবে।
#প্রচুর শাকসবজি খাবে।
#প্রতিদিন সকালে মল ত্যাগ করার অভ্যাস করতে হবে।
#প্রতি তিন মাস অন্তর কৃমির ঔষধ খাবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য হলে দেরী না করে দ্রুত নিকটস্থ্য চিকিৎসা কেন্দ্রে যাবে।